প্রকাশিত:
৮ অক্টোবর, ২০২৫
নরওয়ের নোবেল কমিটি শুক্রবার অসলোতে স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে এবং সেই মুহূর্তেই এ কৌতূহলের অবসান ঘটবে।
তবে এ বছরের প্রেক্ষাপট একেবারেই উজ্জ্বল নয়। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ১৯৪৬ সালে তাদের বৈশ্বিক সংঘাতের ডেটাবেস তৈরির পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোনো বছরেই এত বেশি রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ একসঙ্গে হয়নি। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, তিনি ‘আটটি সংঘাতের সমাধান’ করেছেন, তাই তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের যোগ্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত এই বছর তার নাম ঘোষণার সম্ভাবনা নেই।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও সুইডিশ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন বলেছেন, ‘না, এই বছর ট্রাম্প নোবেল পাবেন না। তবে হয়তো আগামী বছর? তখন হয়তো গাজা সংকটের মতো তার নানা উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক কিছুটা থিতু হবে।’
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের তথাকথিত ‘শান্তিদূত’ ভাবমূর্তি অতিরঞ্জিত, বরং তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিই বিশ্ব শান্তির পথে অন্তরায়।
অসলো শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রায়েগার বলেছেন, ‘গাজায় শান্তি আনার প্রচেষ্টা ছাড়া, আমরা এমন অনেক নীতি দেখেছি যা নোবেলের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—যেমন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতির ভ্রাতৃত্ব ও নিরস্ত্রীকরণ।’ তার মতে, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের এমন এক দীর্ঘ তালিকা রয়েছে, যা নোবেল পুরস্কারের মূল দর্শনের পরিপন্থী।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহুপাক্ষিক চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছেন, মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, মার্কিন শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানকারী পাঁচ সদস্যের কমিটির চেয়ারম্যান ইওরগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ চিত্রটা বিবেচনা করি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক চরিত্র যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই—তারা আসলে শান্তির জন্য কী অর্জন করেছেন।’
এ বছর স্পষ্ট কোনো শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায়, শুক্রবারের ঘোষণার আগে অসলোজুড়ে বিভিন্ন সম্ভাব্য নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে — সুদানের ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস, যারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করছে। রাশিয়ার প্রয়াত ভিন্নমতাবলম্বী আলেক্সেই নাভালনির বিধবা ইউলিয়া নাভালনায়া এবং অফিস ফর ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (ওডিআইএইচআর), যা একটি আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
তবে নোবেল কমিটি চাইলে বিশ্বব্যবস্থার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করতে পারে, বিশেষত যখন সেটি ট্রাম্পের নীতির কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে। সেক্ষেত্রে পুরস্কারটি যেতে পারে—জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের হাতে অথবা জাতিসংঘের কোনো সংস্থার কাছে, যেমন শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বা ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
এ ছাড়া পুরস্কারটি দেওয়া হতে পারে—আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মতো সংস্থাকে, অথবা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোকে, যেমন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস।
তবে শেষ পর্যন্ত নোবেল কমিটি হয়তো আবারও আগের মতোই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একজন বিজয়ী বেছে নিতে পারে—যেমনটি তারা বহুবার করেছে।